বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন
ইন্দুরকানী বার্তা:
পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার উজীয়ালখান গ্রামের মোঃ সোলায়মানের স্ত্রী রেখা সুলতানা মঞ্জু গতকাল শুক্রবার দুপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার এই মৃত্যুতে সৃষ্টি হলো এক নতুন দৃষ্টান্ত। করোনায় মৃত লাশ গোসল করানোর জন্য নিজের আত্মীয়-স্বজনও গোসল দিতে এগিয়ে আসেননি। অথচ মৃত ব্যাক্তির দ্রæত দাফন সম্পন্ন করতে হবে। এমন সংবাদ পেয়ে রক্তের বন্ধনকেও অতিক্রম করে এগিয়ে এলেন একজন মমতাময়ী, একজন মানবতার ফেরিওয়ালা কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ খালেদা খাতুন রেখা। যিনি নিজ জীবনকে তুচ্ছ করে স্বেচ্ছসেবী মাহাফুজা মিলি ও শামীমা আক্তারকে সাথে নিয়ে করোনায় মৃত নারীর গোসল ও পরম মমতায় নিজ হাতে কাফনের কাপড় পড়ালেন। রাত ১২টার দিকে কাউখালী উজীয়াখাল গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে মরহুমের দাফন দেয়া হয়। এ ঘটনাটি কাউখালীর ইতিহাসে তথা দেশের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এদিকে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার এমন কর্মকান্ডতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ তাকে সাধুবাদ জানান। তারা বলেন আক্রান্ত হবার ভয়ে যেখানে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী কেউ এগিয়ে আসেনি। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এগিয়ে আসা সত্যিই প্রসংশার দাবীদার।
দেশে করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারের নির্দেশনা মত দিনরাত মাঠে একজন মানবতার ফেরিওলার মত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। নিজ হাতে ঘরে ঘরে গিয়ে অসহায়দের হাতে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিতেন তিনি। মানুষকে সচেতন করার জন্য নিজে হ্যান্ড মাইক নিয়ে হাট বাজারে গিয়ে করোনার ভয়াবতার ব্যাপারে সচেতন করতেন তিনি। যেখানেই কোন অনিয়ম ঘটত তিনি সরেজমিনে ছুটে গিয়ে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেন। সরকারি সব ধরনের কাজের সচ্ছতার ব্যাপারে তিনি সব সময় বদ্ধপরিকর।
স্থানীয় সমাজ সেবক আব্দুল লতিফ খসরু বলেন, ইউএনও খালেদা খাতুন রেখা একজন ভাল মনের মানুষ এবং তিনি অনেক পরিশ্রমী। একজন সাধারন মানুষের মত তিনি এ উপজেলাবাসীর পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি এ এলাকায় একজন মানবিক ইউএনও হিসেবেও পরিচিত। তার সব ধরনের কাজই প্রশংসার দাবিদার।
কাউখালী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৃদুল আহম্মেদ সুমন বলেন, করোনায় মৃত নারীর দাফনের ব্যবস্থা করে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি করোনাকালের শুরু থেকে গর্ব করার মতো মহতী কাজ করে চলেছেন। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোছাঃ খালেদা খাতুন রেখা বলেন, মহামারি করোনায় আক্রান্ত সুলতানা মঞ্জুর লাশ গোসল করাতে কেউ এগিয়ে আসেনি, এমনকি তার নিকট আত্মীয়-স্বজনও রাজি হয়নি। এমন খবর পেয়ে আমি ব্যথিত হই। এসময়ে আমি আমাদের দাফন কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তারাও কেউ সাহস পাচ্ছিলেন না। পরে মানুষ মানুষের জন্য এই মানবতাবোধ থেকেই আমি দুজনকে সাথে নিয়ে গোসল করাই। তাছাড়া যে কেউ যে কোন মুহূর্তে বিপদে পড়তে পারেন। তাই মানুষ হিসেবে মানুষের মাশে দাড়ানো উচিৎ।